বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব-এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মহিউদ্দিন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে নিয়োগ, বিএড ও স্কেল পরিবর্তন, শিক্ষক এমপিও অনুমোদনসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে নিয়মবহির্ভূতভাবে উৎকোচ গ্রহণ করছেন। এসব কাজে অর্থ ছাড়া কোনো ফাইল অগ্রসর হয় না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।
সূত্রে জানা যায়, মোঃ মহিউদ্দিন ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে হিজলা উপজেলায় সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি নিজেকে সর্বত্র ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার’ পরিচয়ে তুলে ধরছেন, যা প্রশাসনিকভাবে অননুমোদিত ও বিধিবহির্ভূত।
আরও জানা গেছে, সরকারি ওয়েবসাইটেও তিনি নিজেকে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে রেখেছেন। এমনকি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যানার ও ফেস্টুনেও তার নামের পাশে “উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার” লেখা দেখা যায়। ফলে অনেকেই তাকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কর্মকর্তা মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কেবল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের (বরিশাল-৪) ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন হিজলায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ব্যবহার করেই তিনি একাধিকবার একই উপজেলায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। বিএড ও স্কেল পরিবর্তন, এমপিও অনুমোদনসহ প্রতিটি ফাইলে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।
অফিসে উপস্থিতি নিয়েও রয়েছে অনিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে অফিস করার কথা থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিলম্বে অফিসে আসেন এবং প্রায়ই ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত থাকেন। সাংবাদিকরা অফিসে গেলে একাধিকবার তাকে না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
দাপ্তরিক কাজে হিজলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষকরা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। এতে শিক্ষক সমাজে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, “বিএড, স্কেল পরিবর্তন, এমপিও বা নিয়োগ-সব কাজেই টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। সরকারি নিয়ম এখানে অকার্যকর হয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, “আমি নিয়ম মেনেই কাজ করি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করে নিজেকে সরাসরি শিক্ষা কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া যায় কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তারপর পক্ষ থেকে মেলেনি কোন সদুত্তর।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হারুনুর রশীদ বলেন, “এ ধরনের কর্মকাণ্ড যদি সত্য হয়, তা অত্যন্ত অনিয়ম ও অনভিপ্রেত। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”